শুক্রবার । ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ । ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
ফেব্রুয়ারি থেকে যানবাহন চলাচলের আশা

অবশেষে গল্লামারী স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু

একরামুল হোসেন লিপু

অবশেষে গল্লামারী ময়ূর নদীর উপর দৃষ্টিনন্দন স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শুরু হলেও দু’বছরেও কাজ শেষ না হওয়া সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। এ নিয়ে খুলনাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বাড়তে থাকে। থমকে থাকা কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ খুলনা অচলের কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়।

এসব আন্দোলন কর্মসূচির এক পর্যায় অবশেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে। বিদেশ থেকে সেতুর স্টিল স্ট্রাকচারের দুই তৃতীয়াংশ মালামাল ইতোমধ্যে চলে এসেছে। মজুত রাখা হয়েছে সেতুর পশ্চিম পাশে ইয়ার্ডে। আমদানিকৃত ২৮৭ খণ্ডাংশ উন্নত মানের স্টিল এবং ২৮ দশমিক ৬৮ টন নাট বোল্ট ব্যবহৃত হবে সেতুর দৃষ্টিনন্দন স্টিল স্ট্রাকচার তৈরিতে। সেতুর পশ্চিম পাশে সড়কের উপর ব্রিজের স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন বা সংযোজনের প্রস্তুতি জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে দৃশ্যমান হবে সেতুর স্টিল স্ট্রাকচার। ফেব্রুয়ারিতে যানবাহন চলাচলের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘মূল সড়ক থেকে প্রায় সাড়ে চার ফুট উঁচু হবে সেতুর স্টিল স্ট্রাকচার। স্টিলের খণ্ডাংশগুলো একত্রীকরণ বা এসেম্বলির জন্য সেতুর পশ্চিম পাশে সড়কের উপর সাড়ে ৪ ফুট উঁচু এবং ৮০ মিটার লম্বা বালির বেড নির্মাণের কাজ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। নদীর ভিতর সংযোজনকৃত স্টিল স্ট্রাকচার স্থাপনের জন্য স্টেজিংয়ের কাজ শুরু হবে খুব দ্রুতই। সাড়ে ৪ ফুট বালির বেডের উপর রেলের স্লিপারের উপর স্টিলের খন্ডাংশগুলো একত্রীকরণ বা সংযোজন করা হবে। এরপর সংযোজনকৃত ব্রিজের সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচারটি হাইড্রোলিক জ্যাক বা শক্তিশালী কপি কলের মাধ্যমে নদীর উপর নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা হবে।

সরেজমিনে সেতুর পশ্চিমে গিয়ে দেখা যায়, মূল সেতুর স্টিল স্ট্রাকচারগুলো স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্রিজের পশ্চিম পাশে সড়কের উপর বালুর বেড নির্মাণের কাজ চলছে জোরেশোরে।

প্রকল্প ম্যানেজার অপূর্ব বলেন, “এটা কোনো প্রথাগত ব্রিজ নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি হচ্ছে। ব্রিজটি দৃশ্যমান হওয়ার আগে অনেকগুলো স্ট্রেজ অতিক্রম করতে হয়। এতদিন সেগুলোর কাজ চলমান ছিল। স্টিল স্ট্রাকচারের সম্পূর্ণ মালামাল দেশের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। কোনো কারণে ব্রিজের একটা নাট বোল্ট মিসিং হলে সেগুলো আবার দেশের বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে আনাতে হবে। যে কারণে আমাদের খুব সতর্কতার সাথে কাজগুলো করতে হচ্ছে। আশা করি জানুয়ারি মাসে সেতুর স্টিল স্টাকচার দৃশ্যমান হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে যানবাহন চলাচলের টার্গেট নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

প্রকল্প পরিচালক বিপ্লব কুমার পাল বলেন, “সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচারের তৈরি এ জাতীয় ব্রিজ বাংলাদেশ এই প্রথম। খুবই দৃষ্টিনন্দন একটা ব্রিজ হবে। শুরুতে ব্রিজের ডিজাইনসহ বেশ কিছু জটিলতা ছিল। পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। সব মিলিয়ে সময় ক্ষেপণ হয়েছে। সবকিছু ওভারকাম করে এখন একটা টাইম সিডিউলের মধ্যে চলে এসেছি। আশা করি খুব দ্রুতই ব্রিজের কাজটা সম্পন্ন হবে।”

এদিকে নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যানবাহনের চালক এবং পথচারীদের দুর্ভোগ যেন জেঁকে বসেছে। প্রতিদিনই যানজটে নাকাল হচ্ছে মানুষ। নষ্ট হচ্ছে শ’ শ’ কর্মঘণ্টা।

সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, ‘২০২৩ সালের ১ অক্টোবর গল্লামারী ময়ূর নদীর উপর দৃষ্টিনন্দন স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে। চুক্তি অনুযায়ী পাশাপাশি দুটি সেতু এবং ৭৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেতু দুটির দৈর্ঘ্য ৬৮ দশমিক ৭ মিটার, প্রস্থ ২৩ মিটার এবং উচ্চতা হবে ৪ মিটার। সেতু হবে দুই লেন বিশিষ্ট। কার্যাদেশ অনুযায়ী দেড় বছরের মধ্যে সেতু দু’টির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয় ৩০ জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বাড়ানো হয় এক বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রযন্ত।’

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন